বিশেষ সংবাদ
কয়রায় সরিষার রেকর্ড চাষাবাদ, বাম্পার ফলন
খুলনার কয়রা উপজেলায় এবার রেকর্ড পরিমাণে সরিষার চাষাবাদ হয়েছে। উপজেলার আমাদী, বাগালী, মহেশ্বরীপুর, মহারাজপুর, কয়রা সদর, উওর বেদকাশী, দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের চারপাশের সরিষা খেতগুলো শুধু সরিষা ফুলের মৌ মৌ গন্ধে ভরে উঠেছে।
সবুজ-শ্যামল প্রকৃতির ষড়ঋতুর এই দেশে ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে যেমন প্রকৃতির রূপ বদলায়, তেমনি বদলায় ফসলের মাঠও।
কখনও সবুজ, কখনও সোনালি, কখনও-বা হলুদ। এমনই ফসলের মাঠ পরিবর্তনের এ পর্যায়ে হলুদ সরিষা ফুলের চাদরে ঢাকা পড়েছে ফসলের মাঠ। বিকাল হলেই মাঠগুলোতে প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে ছবি তুলছেন অনেকে।
আরও পড়ুন: খুলনায় সরিষার বাম্পার ফলনের প্রত্যাশা
সরিষা প্রধানত আবাদ হয় দোঁআশ ও বেলে-দোঁআশ মাটিতে। বর্তমানে সরিষা একটি লাভজনক ফসলে পরিণত হওয়ায় কয়রায় ধীরে ধীরে সরিষার আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কয়রা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে কয়রা উপজেলায় ২১০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। সরিষা চাষে উপজেলার ২০০ জন কৃষককে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এই প্যাকেজে প্রত্যেক কৃষক পেয়েছেন ১০ কেজি ডিএপি, ১০ কেজি এমওপি সার এবং ১ কেজি সরিষার বীজ।
কালনা গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, আমি এ বছরে ৭ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছি। গত বছরও ৫ বিঘা জমিতে সরিষা লাগিয়েছিলাম, ফলন বাম্পার হয়েছিল। এ বছরও বাম্পার হয়েছে।
বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের তরুণ কৃষক আশরাজ্জামান লিটন বলেন, আমি কয়রা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে এ বছর আমি প্রথমবার সরিষা লাগিয়েছি। ফলনও বাম্পার হয়েছে। যদি কোনো দুর্যোগে আঘাত না হানে, তাহলে বাম্পার ফলন পাওয়া যাবে।
বেদকাশী গ্রামের কৃষক মোহর আলী গাইন বলেন, আমি প্রতি বছর সরিষা লাগাই। এ বছরে ২ বিঘা জমিতে সরিষা লাগায়েছি। ভালো ফলন হয়েছে।
আরও পড়ুন: মাদারীপুরে সরিষার বাম্পার ফলন, লাভের প্রত্যাশা
কম খরচে সরিষা চাষে বাম্পার ফসল পাওয়া যায় বলে জানান তিনি।
কয়রা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, কয়রা উপজেলায় সূর্যমুখীর পাশাপাশি সরিষার ব্যাপক সম্ভবনা রয়েছে। এবার অতিবৃষ্টির কারণে আমন দেরিতে হওয়ায় সরিষার আবাদ কিছুটা কম হয়েছে। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তেরের পরামর্শে কৃষক ভাইয়েরা বিনা চাষে সরিষার আবাদ করে ক্ষতি পুষিয়ে নিয়েছেন।
১১ ঘণ্টা আগে
চাঁদপুরে অর্ধেকে নেমে গেছে সবজির দাম, দুশ্চিন্তায় কৃষক
পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীবেষ্টিত চাঁদপুরের সব হাটবাজারে বেশিরভাগ শাকসবজির দাম ৩/৪ সপ্তাহ আগের তুলনায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। এতে ক্রেতাসাধারণের মাঝে স্বস্তি এলেও ফসল চাষের খরচ তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের প্রাচীনতম পাল বাজারের পাইকারি আড়তে শীতকালীন শাকসবজির সমাহার। দৈনিক কয়েক টন শাকসবজি আড়তে আসছে বলে জানান বাজারের ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা।
প্রতিদিন ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত শাকসবজি নিয়ে শহরের ১০ নম্বর ঘাটে ভিড়ছে নৌকা ও ট্রলার। এসব নৌযান চাঁদপুর, হাইমচর ও মতলব উত্তরের প্রায় ৩০টি চরাঞ্চল থেকে তরতাজা শাকসবজি নিয়ে এই বাজারে আসে।
সেসব পণ্য ঘাটে নামানোর পর বাজারের ২০-২৫টি পাইকারি আড়তে নেওয়া হয়। এরপর পাইকারি মূল্যে সেখান থেকে কিনে নিয়ে শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন স্থানে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তা বিক্রি করেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।
শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ব্যস্ততম বিপনীবাগ বাজার, পাল বাজারের খুচরা বাজার, নতুন বাজার, পুরান বাজার, ওয়ারলেস বাজার, মিশন রোডের চৌরাস্তা বাজার, শহরতলীর আনন্দবাজার, বাবুরহাট, শাহতলী ও মহামায়া বাজারে ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ শাকসবজির দাম উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। কম দামে সবজি পেয়ে ক্রেতারাও খুশি।
এসব বাজারে বর্তমানে নতুন আলু প্রতি কেজি ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, অথচ ১০-১৫ দিন আগেও তা বিক্রি হয়েছে ৬৫ টাকা কেজি। এছাড়া পেপে ৩০টাকা কেজি, ভালো মানের টমেটো ৪০ টাকা কেজি, বেগুন ৪০ টাকা কেজি, চিচিঙ্গা ৪০ টাকা, মুলা ২০ টাকা কেজি, গাজর ৫০-৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ টাকা প্রতি পিস যা ৮-১০দিন আগে বিক্রি হতো ৪০-৫০ টাকায়, বাঁধা কপি ৩০ টাকা পিস, যা ৮-১০ দিন আগে বিক্রি হতো ৫০-৬০ টাকায়, ব্রকোলি ৫০-৬০ টাকা পিস, কাঁচা কলার হালি ৩০টাকা, করলা ও মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা কেজি, লাউ (মাঝারি সাইজ) ৪০ টাকা পিস, কাঁচা মরিচ ৪০-৪৫ টাকা কেজি, ধনে পাতা ৪০ টাকা কেজি, লেবুর হালি ১৫-২০ টাকা , ধুন্দল ও শসা ৩০ টাকা কেজি এবং খিরার কেজি বর্তমানে ২০ টাকা।
এছাড়া লালশাক, পুঁইশাক, লাউশাক, কুমড়া শাক, মুলা শাক, কলমিশাক, কলাই শাকসহ সব ধরনের শাক ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ১০/১৫ দিন আগেও এগুলোর দাম ছিল ৫০ টাকার আশপাশে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, শহরের সব বাজারেই আজকাল শাকসবজির আমদানি বেড়েছে। বিভিন্ন স্থান থেকে শহরে নৌ ও সড়ক পথে প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি আসছে, তাই দাম পড়ে গেছে। ফলে ব্যবসা চালাতে তাদের মুলধনও কম লাগছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে ফল ও সবজিতে কীটনাশকের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি: সেমিনার
১ দিন আগে
ঢাকায় রিকশার ব্যাপক বিশৃঙ্খলা, কর্তৃপক্ষ নীরব
জনবহুল রাজধানী ঢাকার সর্বত্র রিকশার সংখ্যা বাড়ায় তীব্র যানজট হলেও এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে কর্তৃপক্ষ অনীহা দেখিয়ে আসছে বলে অভিযোগ করছেন নগরবাসীরা।
নগরীতে দীর্ঘদিন ধরে বসবাসকারী সাইফুল আজম ইউএনবির প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘যানজটের ওপর দৃশ্যমান প্রভাব সত্ত্বেও রিকশার সংখ্যা সম্পর্কে সঠিক তথ্য না থাকা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।’
ইউএনবির এক তদন্তে রিকশা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ঘাটতি থাকার বিষয়টি উঠে এসেছে। যা তথ্য এবং সঠিক বাস্তবতার মধ্যে একটি উদ্বেগজনক পার্থক্য দেখা গেছে।
বর্তমানে ঢাকার ১০ শতাংশ বাসিন্দা ব্যক্তিগত যানবাহন ব্যবহার করেন, ২৫ শতাংশ গণপরিবহন, ৫ শতাংশ অটোরিকশা ও ট্যাক্সি ব্যবহার করেন।
ব্যাটারিচালিত রিকশা: বাড়ছে উদ্বেগ
ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা বৃদ্ধি শহরের যানজট সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। লাইসেন্স বা আনুষ্ঠানিক অনুমোদন ছাড়াই চলাচলকারী এই যানবাহনগুলো প্যাডেল রিকশা চালকদের জন্য হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের জীবিকা নির্বাহের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে বলেও তারা যুক্তি দিচ্ছেন।
২০১৪ সালে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ব্যাটারিচালিত রিকশার ওপর হাইকোর্ট নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পরও এটি থামেনি, বরং বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর জারি করা আরেকটি নির্দেশনায় এ ধরনের রিকশা আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়। তবে ঢিলেঢালা আইন প্রয়োগের কারণে ঢাকার সড়কে এসব বাহনের লাগামহীন বৃদ্ধি ঘটছে।
অনুমোদন প্রদান এবং তথ্য বৈষম্য
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নামে বিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) তিন দশক আগে প্যাডেল রিকশার লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ করে দেয়। কারণ, যানজটের জন্য এসব রিকশাই ভূমিকা রাখে ।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় অনুমোদিত রিকশার সংখ্যা ২ লাখ ২০ হাজার ৩৭৯টি, যার মধ্যে ডিএনসিসির ৩০ হাজার ১৬২টি এবং ডিএসসিসিতে ১ লাখ ৯০ হাজার ২১৭টি।
আরও পড়ুন: জুরাইন লেভেল ক্রসিংয়ে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের অবরোধ, রেল চলাচল ব্যাহত
কিন্তু, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) ২০১৯ সালের এক গবেষণায় ঢাকায় প্যাডেল রিকশার সংখ্যা ১১ লাখ ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে, যার মধ্যে মাত্র ৩ থেকে ৪ শতাংশ নিবন্ধিত রিকশা।
নেপথ্যের শক্তি
রিকশাচালকদের সাক্ষাৎকারে জানা গেছে, রাজনীতিবিদ, প্রশাসক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সম্পৃক্ততার কারণে রিকশার সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা চ্যালেঞ্জিং। এই গোষ্ঠীগুলো রিকশা খাতের মুনাফা এবং সরকারি রাজস্বে এর ন্যূনতম অবদান বিবেচনা করে অবৈধভাবে রিকশা পরিচালনার সুরক্ষা এবং সহায়তা করে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এক দশকের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্যাডেল রিকশাচালক জব্বার শোষণের গল্প শোনান: ‘আমরা যে অর্থ উপার্জন করি, তার বেশিরভাগই মালিকদের দিতে হয়। আমরা প্রতিদিনের সঞ্চয়, রাস্তার খরচ এবং যেকোনো ক্ষতির জন্য অর্থ দিয়ে থাকি। একটি রিকশা হারিয়ে গেলে কিস্তিতে তার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। রিকশার মালিকানা ব্যয়বহুল এবং এলাকার উপর নির্ভর করে। গুলশান ও বনানীর মতো জায়গায় বাড়তি বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়। আমরা প্রতিদিন কঠোর পরিশ্রম করছি, কিন্তু খুব কম আয় করি। ‘
আরও পড়ুন: ডিএমপির আশ্বাসে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের কর্মসূচি স্থগিত
আরেক রিকশাচালক সুমন আলী জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় এবং ব্যাটারিচালিত রিকশার সঙ্গে প্রতিযোগিতার কারণে সৃষ্ট সমস্যার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘এখন সবকিছুর দাম বেশি, তবে ব্যাটারিচালিত রিকশা আমাদের যাত্রীদের নিয়ে যাওয়ার কারণে আমাদের পক্ষে এটি আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। মানুষ প্রায়ই আমাদের চেয়ে তাদের (ব্যাটারিচালিত রিকশা) বেশি পছন্দ করে।’
রিকশার মালিকানায় বিনিয়োগ
বিনিয়োগকারীদের জন্য রিকশার মালিকানা একটি লাভজনক সুযোগ করে দেয়। একটি নতুন বা মেরামত করা রিকশার ভাড়া প্রায় ২০ হাজার টাকা। আর এমন রিকশার জন্য দৈনিক জমা দিতে হয় ২০০ টাকা।
পাঁচটি রিকশার জন্য এক লাখ টাকা বিনিয়োগ করলে ছয় মাসের মধ্যে লাভবান হতে পারেন বিনিয়োগকারী। প্রতি সাড়ে ৫ মাসে ১০ শতাংশ ক্ষতির হার ধরে ৩ বছর ২ মাসে তাত্ত্বিকভাবে ৩২০টি রিকশার বহর তৈরি করতে পারেন তিনি। এতে পার্কিং ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বাদ দিলে মাসিক আয় হবে ৬ লাখ ১২ হাজার টাকা।
আরও পড়ুন: ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল
সাংগঠনিক শোষণ
ঢাকা বিভাগ রিকশা ও ভ্যান মালিক সমিতি এবং বাংলাদেশ রিকশা মালিক লীগসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে রিকশার নম্বর প্লেট দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
ডিএসসিসি নিশ্চিত করেছে, ১৯৮৬ সাল থেকে রিকশার লাইসেন্স দেওয়া হয়নি। তবুও এই সংস্থাগুলো আদালতের স্থগিতাদেশের কথা উল্লেখ করে অনুমোদন দেওয়া অব্যাহত রেখেছে।
রিকশার গুরুত্ব
এসব প্রতিকূলতা সত্ত্বেও রিকশা ঢাকার পরিবহন ও অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো যাতায়াত, স্কুলে যাওয়া-আসা এবং বিনোদনমূলক উদ্দেশ্যে বিশেষত বর্ষার সময় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। হিসাব অনুযায়ী, সারা বাংলাদেশে ১০ থেকে ৪০ লাখ রিকশা চলাচল করে, যারা প্রতিদিন আড়াই কোটি যাত্রী পরিবহন করে।
কিন্তু অটোরিকশার অতিরিক্ত বৃদ্ধির কারণে যানজট বেড়েছে। ফলে সড়ক দুর্ঘটনা ও অতিরিক্ত গতির কারণে নিরাপত্তা ঝুঁকিসহ বাড়তি চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। অনেক অটোরিকশা চালকের অভিজ্ঞতাও নেই, যারা সড়ক ব্যবহারকারীদের আরও বিপদে ফেলছে।
যদিও রিকশা পরিবেশবান্ধব এবং কোনো ক্ষতিকর নিঃসরণ করে না, কিন্তু এগুলোর ধীর গতি ও ক্রমবর্ধমান সংখ্যা ঢাকার যানজট বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে।
একটি সাংস্কৃতিক প্রতীক
বিশ্বে সবচেয়ে বেশি রিকশা চালানোর রেকর্ড রয়েছে বাংলাদেশে। শুধু ঢাকায় এর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ প্রতিদিন চলাচল করছে।
২০২৩ সালে রিকশা ও রিকশাশিল্পকে বাংলাদেশের অস্পষ্ট সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ইউনেস্কো।
রিকশার ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি, বিশেষ করে ব্যাটারিচালিত রিকশার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপের দাবি রাখে। কার্যকর নিয়ন্ত্রণ ও প্রয়োগ ছাড়া পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যা ঢাকার ইতোমধ্যে চাপযুক্ত পরিবহন ব্যবস্থাকে আরও অচল করে দেবে।
আরও পড়ুন: ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলতে বাধা নেই, সুপ্রিম কোর্টের স্থিতাবস্থা জারি
১ দিন আগে
নির্বাচন ঘিরে বিএনপি-জামায়াতের বিভেদ কী গভীর হচ্ছে?
গেল ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগ রাজনীতির মাঠে অনুপস্থিত থাকায় আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে দীর্ঘদিনের দুই শরিক বিএনপি ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী পরস্পর দূরে সরে যাচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে গভীর বিভেদ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। তাদের নেতারা পরস্পরকে তীব্র সমালোচনা করছেন, যা দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে নতুন মেরুকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, অতীতে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাদের মধ্যে যে মাত্রার বৈরিতা হয়েছে তা নজিরবিহীন। কারণ উভয় দলই তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রদর্শন করার চেষ্টা করছে।
নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে ফিরে আসতে না পারলে ত্রয়োদশ সংসদে শক্তিশালী বিরোধী দল হিসেবে আবির্ভূত হতে জামায়াত অন্যান্য ইসলামপন্থী দলগুলোর সঙ্গে জোট গঠনের চেষ্টা করতে পারে বলেও ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন তারা।
তবে আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারলে এবং নির্বাচনে অংশ নিতে পারলে বিএনপির জোটের অধীনে জামায়াতের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা।
বর্তমান টানাপোড়েন সত্ত্বেও বিএনপি ও জামায়াত উভয় দলের সিনিয়র নেতারা ইউএনবিকে বলেছেন, তারা তাদের ঐক্য নষ্ট করতে চান না। কারণ, তারা বিশ্বাস করেন যেকোনো বিভক্তি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ফিরে আসাকে সহজ করতে পারে।
গণঅভ্যুত্থানের পর দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব তীব্রতর হয়, প্রধানত ইসলামী ব্যাংকের দখল এবং অভ্যুত্থানের কৃতিত্ব নেওয়া নিয়ে সৃষ্ট বিরোধকে ঘিরে।
এরপরই জামায়াত নেতারা বিএনপির বিরুদ্ধে সারা দেশে 'দখল ও চাঁদাবাজি' করার অভিযোগ করেন।
বিএনপি প্রথমে কোনো মন্তব্য না করলেও ২৯ ডিসেম্বর বিএনপির সিনিয়র নেতা রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেন, শুধু ভারত নয়, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধবিরোধীসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এই অস্থিরতাকে নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে।
আরও পড়ুন: রিজভী-খসরুসহ বিএনপি-জামায়াতের সহস্রাধিক নেতা-কর্মীর জামিন
রিজভী জামায়াতের বিরুদ্ধে ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দখল ও টেন্ডার কারসাজির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ করেন। জবাবে জামায়াত এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে।
জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান গত ২৩ ডিসেম্বর রংপুরে এক অনুষ্ঠানে বলেন, দেশে পরীক্ষিত দেশপ্রেমিক শক্তি মাত্র দু'টি- একটি সেনাবাহিনী, অন্যটি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
পরে রিজভী জামায়াতপ্রধানের বক্তব্যকে হাস্যকর আখ্যায়িত করেন এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে 'ইসলামপন্থী দলের' ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) এক অনুষ্ঠানে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ জামায়াতের সমালোচনা করে বলেন, তারা (জামায়াত) ক্ষমা চাওয়ার পরিবর্তে একাত্তরের ভূমিকাকে জায়েজ করার চেষ্টা করছে।
দল দুটির সমর্থকরা সামাজিক মাধ্যমে বিশেষভাবে সক্রিয় হয়ে কঠোর শব্দ বিনিময় করেছে এবং তাদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান শত্রুতাকে ঘি ঢালছে।
বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে একটি স্থায়ী সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষত ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় এবং ১৯৯৯ সালে তারা আনুষ্ঠানিক জোট গঠন করেছিল। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে ২০ দলীয় জোট ভেঙে যাওয়া পর্যন্ত তারা রাজনৈতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ ছিল।
বিশেষ করে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বিএনপি ২০ দলীয় জোট ভেঙে দিয়ে কিছু বামপন্থীসহ আরও অনেক দলের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করার পর থেকে বেশ কিছুদিন ধরেই দুই দলের মধ্যে লক্ষণীয় মতপার্থক্য ও বিভেদ দেখা যাচ্ছে।
২০১৮ সালে জামায়াতকে উপেক্ষা করে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামসহ কয়েকটি দলের সমন্বয়ে বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করায় বিএনপি-জামায়াত সম্পর্কের অবনতি ঘটে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার ও ফাঁসি কার্যকরের বিষয়ে নীরবতা পালন করায় জামায়াত বিএনপির প্রতি ক্ষোভ পোষণ করে। পরে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের পর মতপার্থক্য মিটে গেলেও এখন আবার উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
বিএনপির কয়েকজন নেতার অভিযোগ, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পরপরই জামায়াতের আমির প্রথম বিএনপিকে আক্রমণ করে বলেছিলেন, 'একজন জালিম চলে গেলেও আরেকজনের দেশের লাগাম নেওয়া উচিত নয়।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গত সেপ্টেম্বরে বিএনপি আগাম নির্বাচনের দাবি জানালেও যাদের জনসমর্থন নেই তারা নির্বাচন চায় না।
বিএনপি নেতারা বলছেন, নির্বাচনের রোডম্যাপ ও আগাম নির্বাচনের ব্যাপারে তারা সক্রিয়ভাবে সোচ্চার হলেও জামায়াত তাদের অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে নির্বাচন পেছাতে চায়।
তারা বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে জামায়াত এখন স্থানীয় সরকার নির্বাচন চাইছে, যা বিএনপির অবস্থানের পরিপন্থী।
যোগাযোগ করা হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, জামায়াত নেতাদের নেতিবাচক বক্তব্যে বিএনপি নেতাকর্মীদের ক্ষোভ থাকা স্বাভাবিক।
তিনি বলেন, 'গত ৪৬ বছরে জামায়াত নির্বাচনী হিসাব-নিকাশে বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী না হলেও মনে হচ্ছে দলটি বিএনপিকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ভাবতে শুরু করেছে।’
টুকু বলেন, জামায়াত নেতাদের তাদের রাজনৈতিক বক্তব্যের ব্যাপারে আরও সতর্ক হওয়া উচিত, কারণ বিএনপি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে গণতন্ত্রপন্থী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করার দিকে মনোনিবেশ করছে।
ইউএনবির সঙ্গে আলাপকালে জামায়াতে ইসলামীর প্রচার সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, বিএনপির কিছু নেতা পুরোনো শব্দ ও অবমাননাকর বাক্য ব্যবহার করে জামায়াতের বিরুদ্ধে কটুক্তি করছেন।
আকন্দ বলেন, 'জামায়াত সম্পর্কে এত পুরোনো বক্তব্য দেশের মানুষ গ্রহণ করেনি। তারা যদি এসব সেকেলে বক্তব্য গ্রহণ করতেন তাহলে জামায়াতের জনপ্রিয়তা ও সাংগঠনিক সম্প্রসারণ বাড়ত না ‘
তিনি বলেন, জামায়াতের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তায় কিছু বিএনপি নেতা ঈর্ষা ও হিংসার বশবর্তী হয়ে এমন আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিচ্ছেন।
আকন্দ অবশ্য দাবি করেন, কিছু নেতা মৌখিক বাক্য বিনিময় করলেও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে উভয় দল ঐক্যবদ্ধ রয়েছে।
জামায়াতের এই নেতা বলেন, ‘দুই দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে কোনো মনোমালিন্য নেই। আমিও মনে করি, দুই পক্ষের সম্পর্কের অবনতি হয়নি। কিছু নেতা হতাশা ও অহংকার থেকে মন্তব্য করছেন। এটা সাময়িক অবস্থান। মূল ঐক্য অটুট রয়েছে।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে জামায়াত বিএনপির বিরুদ্ধে নেতিবাচক মন্তব্য করে তৃণমূলের সংগঠনকে উজ্জীবিত ও সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলকে চ্যালেঞ্জ করে জামায়াতপন্থী ছাত্রশিবিরও সব শিক্ষাঙ্গনে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কেন্দ্র পর্যায়ে নয়, দুই দলের তৃণমূল পর্যায়ে ফাটল ধরেছে। তবে নির্বাচনের আগে হয় দুই দল পুনরায় একত্রিত হবে, না হয় নতুন মেরুকরণ হবে।’
আরও পড়ুন: পদোন্নতির দাবিতে একট্টা হচ্ছেন সচিবালয়ের বিএনপি-জামায়াতপন্থী কর্মকর্তারা
২ দিন আগে
বছরের শুরুতেই মোংলা বন্দরে বিদেশি জাহাজের চাপ
সম্প্রতি দেশের দ্বিতীয় সমুদ্রবন্দর মোংলায় বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজের আগমন বৃদ্ধি পেয়েছে। নতুন বছরের প্রথম ১০ দিনে বন্দরে ভিড়েছে মোট ২৮টি বাণিজ্যিক জাহাজ। এতে করে ব্যস্ত সময় পার করছেন বন্দরের শ্রমিক-কর্মকর্তারা।
শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) রুপপুর পাওয়ার প্ল্যান্টের মালামাল নিয়ে দুটি কন্টেইনারবাহী জাহাজ মোংলা বন্দরে নোঙ্গর করে। এর ফলে বন্দরের বিভিন্ন পয়েন্টে বর্তমানে ১৮টি জাহাজ অবস্থান করছে বলে জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, কর্তৃপক্ষের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, সাড়ে ৭ মিটার গভীরতা ও ১৪২ দশমিক ৭০ মিটার দৈর্ঘ্যের বারমুডার পতাকাবাহী এমভি পাকান্ডা অ্যান্টিগা নামের একটি জাহাজ বন্দরের ৭ নম্বর জেটিতে ভিড়েছে। জাহাজটিতে ১৯০টি টিউজ কন্টেইনার রয়েছে।
এছাড়া ২০৭টি টিউজ নিয়ে মার্কস ঢাকা নামে আরও একটি কন্টেইনারবাহী জাহাজ ৮ নম্বর জেটিতে ভেড়ার কথা রয়েছে। পানামার পতাকাবাহী এই জাহাজটি ১৮৬ মিটার বিশাল দীর্ঘ ও ৭ দশমিক ১০ মিটার গভীর।
পাশাপাশি রাশিয়ার পতাকাবাহী এমভি মেলিনা নামের একটি জাহাজ রুপপুর পাওয়ার প্ল্যান্টের জেনারেল কার্গো (মেশিনারি) বন্দরের ৯ নম্বর জেটিতে অবস্থান করছে।
এ বিষয়ে মোংলা বন্দরের উপপরিচালক মো. মাকরুজ্জামান জানান, ২০২৫ সালের শুরুতে মোংলা বন্দরে বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজের আগমন বেড়েছে। বর্তমানে বন্দরের পশুর চ্যানেলের বিভিন্ন স্থানে ১৮টি বাণিজ্যিক জাহাজ অবস্থান করছে। এসব জাহাজে কয়লা, সার (জিপসাম, ড্যাপ, টিএসপি ও এমওপি), ক্লিংকার, এলপিজি ও পাথরসহ বিভিন্ন পণ্য রয়েছে।
বিজ্ঞপ্তি থেকে আরও জানা যায়, ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের প্রথম ৬ মাসে মোংলা বন্দর মোট ৪১৩টি বাণিজ্যিক জাহাজ আসে। এ সময়ে ১০ হাজার ৩৮৬টি টিউজ কন্টেইনার খালাস করা হয়।
প্রথম ছয় মাসে গাড়ি বহনকারী ১০টি জাহাজ থেকে ৫ হাজার ৬৩৭টি গাড়ি আমদানি করা হয়েছে। এই সময়ে বন্দর দিয়ে সর্বমোট আমদানি-রপ্তানি হয়েছে ৫২ লাখ ৮৪ হাজার ৪৭১ টন পণ্য, যা থেকে ২১০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের তুলনায় ২০২৩-২০২৪-এ মোংলা বন্দরে বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজের আগমনের ক্ষেত্রে ২ দশমিক ৩০ শতাংশ, কার্গো ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ, কন্টেইনারবাহী জাহাজ ১৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ এবং গাড়ির ক্ষেত্রে ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
২ দিন আগে
সরিষা ও মধুতে ভাগ্য বদলে যাচ্ছে নওগাঁর কৃষকদের
নওগাঁর বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠজুড়ে এখন হলুদের ঢেউ। জেলার বিভিন্ন এলাকায় শর্ষে খেতে ফলন আসায় এমন চোখ জুড়ানো দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। সরিষার এসব জমির পাশেই মৌ বাক্স বসিয়েছেন মৌচাষিরা। এতে মৌমাছির মাধ্যমে সরিষা ফুলের পরাগায়নে সহায়তা হচ্ছে। ফলে একদিকে সরিষার উৎপাদন বাড়ছে, অপর দিকে মধু আহরণ করা যাচ্ছে। সমন্বিত এই চাষে কৃষক ও মৌচাষি উভয়েরই ভাগ্য বদলে যাচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁ জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলার ১১টি উপজেলায় এ বছর ৬০ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) পর্যন্ত ৮ হাজার ৩০০টি মৌ বাক্স স্থাপন করে মধু সংগ্রহ করছেন ৮২ জন মৌচাষি।
নওগঁ সদর, রাণীনগর, আত্রাই, মান্দা, সাপাহার, ধামইরহাট, পোরশা ও নিয়ামতপুর উপজেলায় ৪ হাজার ৪৮৫ হেক্টর জমির শর্ষেখেতে এসব মৌ বাক্স স্থাপনা করা হয়েছে। ৮ হাজার ৩০০ মৌ বাক্স থেকে চলতি মৌসুমে ২ লাখ ৭০ হাজার কেজি (২৭০ মেট্রিক টন) মধু সংগ্রহ হবে বলে ধারণা করছে কৃষি বিভাগ। প্রতি কেজি মধুর ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এবার জেলায় সরিষার ফুল থেকে প্রায় ১০ কোটি ৮০ লাখ টাকার মধু সংগ্রহ হতে পারে।
শর্ষেখেতে মৌখামার করে মধু চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখছেন স্থানীয় কৃষি বিভাগ। নওগাঁর মান্দা উপজেলায় সবচেয়ে সরিষার আবাদ হয়েছে। এ উপজেলায় মৌখামারের সংখ্যাও বেশি। মান্দায় এ বছর ১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিজুড়ে সমন্বিতভাবে সরিষা ও মৌচাষ হয়েছে। উপজেলার তেতুলিয়া, ভারশো, পরানপুর, কালিকাপুর ও ভালাইন ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠে শর্ষেখেতের পাশে ৫০ জন মৌচাষি মৌখামার করেছেন।
মান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শায়লা শারমিন বলেন, সরিষাখেতে মৌমাছির আনাগোনা থাকলে সরিষার ফলন স্বাভাবিকের চেয়ে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ বেশি বাড়ে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, মৌমাছি সরিষার ফুলে যে পরাগায়ন ঘটায় তাতে সরিষার দানা ভালো হয় এবং ফলন বাড়ে। যে সরিষাখেতে মৌমাছি আনাগোনা থাকে না সেখানে ফলন কম হয়।
আরও পড়ুন: মাদারীপুরে সরিষার বাম্পার ফলন, লাভের প্রত্যাশা
স্থানীয় কৃষক ও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধির কারণে গত দুই-তিন বছর ধরে কৃষকেরা বেশি পরিমাণ জমিতে সরিষার আবাদ করছেন। এছাড়া গত মৌসুমে সরিষার ভালো দাম পাওয়ার কারণেও এবার অনেক কৃষক সরিষা চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। এছাড়া ভোজ্যতেলের চাহিদা মেটাতে সরিষার আবাদ বাড়ানোর জন্য সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী কৃষি বিভাগ নানাভাবে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করেছেন। সরিষা চাষে আগ্রহী করে তুলতে এ বছর ৫৭ হাজার কৃষকের প্রত্যেককে এক বিঘা জমিতে সরিষা চাষের জন্য বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ করেছে কৃষি বিভাগ। চলতি মৌসুমে জেলায় উচ্চফলনশীল (উফশী) বারি-১৪, বারি-১৫ ও বারি-১৭ জাতের সরিষা আবাদ হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় টরি-৭ জাতের সরিষার আবাদ করেছেন কৃষকরা। এসব জাতের সরিষা নভেম্বরের শুরু থেকে নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত আবাদ করতে হয়। ফসল ঘরে উঠতে সময় লাগে জাত ভেদে ৭০ থেকে ৯০ দিন।
সম্প্রতি জেলার মান্দা ও নওগাঁ সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন সরিষা ফুলের সমারোহ। কৃষকেরা যেমন মাঠে সরিষার পরিচর্যা করছেন, তেমনি খেতের পাশে মৌমাছির বাক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহ করছেন মৌচাষিরা।
গত বৃহস্পতিবার মান্দা উপজেলার তেতুলিয়া ইউনিয়নের সাটইল গ্রামের পাশে অবস্থিত একটি মাঠে গিয়ে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সরিষার চাষ হয়েছে। মাঠজুড়ে হলুদের সমারোহ। মাঠের পাশে একটি আমবাগানে ১৫০টি মৌ বাক্স স্থাপন করেছেন মৌচাষি আবু বক্কর সুজন। পার্শ্ববর্তী পিরাকৈর মাঠে তার আরও একটি মৌখামার রয়েছে। ওই খামারে ১৫০টি মৌ বাক্স রয়েছে। সুজন ঠাকুরগাঁও থেকে এসেছেন মধু সংগ্রহের জন্য।
আবু বক্কর সুজন বলেন, মৌখামারের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি ১২ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে ঘুরে মধু সংগ্রহ করছেন। ২০ দিন হলো তিনি সাটইল ও পিরাকৈর মাঠে মৌ বাক্স বসিয়েছেন। এ পর্যন্ত ৩০০টি বাক্স থেকে চার বার মধু সংগ্রহ করছেন। প্রতিবার একটি বাক্স থেকে ৭ থেকে ৮ কেজি মধু পাওয়া যায়। এ পর্যন্ত প্রায় ৯ হাজার কেজি সংগ্রহ করেছেন তিনি। আরও দুই সপ্তাহ এসব মাঠ থেকে মধু পাওয়া যায়। সরিষার খেতে ফুল কমে গেলে তিনি সংগ্রহের জন্য অন্য মাঠে চলে যাবেন।
আরও পড়ুন: ঠাকুরগাঁওয়ে সরিষার আবাদ বেশি হওয়ায় মধু সংগ্রহে ব্যস্ত মৌয়ালরা
মৌচাষি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ১৪ দিন হলো তিনি ওই মাঠে মধু সংগ্রহের জন্য বাক্স বসিয়েছেন। এ পর্যন্ত তিনি ৪০০টি বাক্স থেকে দুই বার মধু সংগ্রহ করেছেন। প্রতিবার একটি বাক্স থেকে ৭ থেকে ৮ কেজি মধু পাওয়া গেছে। এ পর্যন্ত ৫ হাজার ৮০০ কেজি মধু সংগ্রহ করেছেন তিনি। আরও তিন সপ্তাহ ওই মাঠ থেকে মধু পাওয়া যাবে। সরিষার খেতে ফুল কমে গেলে তিনি মধু সংগ্রহের জন্য অন্য মাঠে চলে যাবেন।
সাটইল গ্রামের কৃষক হুমায়ুন কবির বলেন, ‘রাজশাহীর তানোর উপজেলার এক মৌচাষির কাছ থেকে মৌখামারের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে ৬ বছর ধরে নিজের সরিষাখেতের পাশে মৌবাক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহ করছি। গত বছর ১০০টি বাক্স থেকে ১৩ লাখ টাকার মধু বিক্রি করেছি। এবার মধুর দাম বেশি। ১০০টা বাক্স থেকে আশা করছি, এবার ১৫ থেকে ১৬ লাখ টাকার মধু সংগ্রহ হতে পারে। মৌসুমের সময় খামারে ৬ থেকে ৭ জন শ্রমিক কাজ করে। মধু নিষ্কাশন যন্ত্রের সাহায্যে মৌ বাক্সে স্থাপিত মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করা হয়।’
মান্দা উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল মজিদ এবার ১৫ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন। গত বছর ৫ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছিল।
আব্দুল মজিদ বলেন, ‘প্রতি বছর সাত থেকে আট বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়। সাধারণত অন্যান্য বছরগুলোতে মাঠের নিচু জমিগুলোতে ডিসেম্বর মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত পানি জমে থাকতো। তবে এবার বর্ষায় বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় নভেম্বরের আগেই নিচু জমিগুলা থেকে পানি নেমে গেছে। বোরো ধান লাগানোর আগ পর্যন্ত দুই-তিন মাস ১০ বিঘা নিচু জমি ফেলে না রেখে সেগুলোতেও সরিষার আবাদ করেছি। সরিষা গাছে ফুল ভালো এসেছে। আশা করছি, ফলনও ভালো পাবেন।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘নওগাঁয় এ বছর ৬০ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। এসব জমির পাশে রবিবার পর্যন্ত ৮ হাজার ৩০০ মৌ বাক্স স্থাপন করা হয়েছে। বাক্সে থাকা মৌমাছি সরিষার ফুলে ফুলে ঘুরে ঘুরে মধু সংগ্রহ করছে। এতে সরিষা ফুলের পরাগায়নে সহায়তা হচ্ছে। ফলে একদিকে সরিষার ফলন বাড়ছে, অন্যদিকে অতিরিক্ত হিসেবে মধু পাচ্ছেন মৌচাষিরা। সমন্বিত চাষে কৃষক ও মৌচাষি উভয়ই লাভবান হচ্ছেন। গত বছরও এ জেলায় সরিষাখেতের পাশে ৭ হাজার ৮০০ মৌ বাক্স বসেছিল। নওগাঁয় রবিশস্য সরিষার সঙ্গে মৌমাছি পালন করে মধু সংগ্রহ ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে ১৫১.৩৮ কোটি টাকার সরিষার ফলনের প্রত্যাশা চাষিদের
২ দিন আগে
সত্যপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়: সংকটের শেষ কবে
দরজা-জানালা সব ভেঙে গেছে, দেওয়ালগুলো জরাজীর্ণ, খুলে পড়ছে চালের টিন; বর্ষাকালে বৃষ্টি এলে পানি পড়ে শ্রেণিকক্ষে, স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ, শীত-রোদ-বৃষ্টি যাই হোক, ক্লাস করতে মন বসে না শিক্ষার্থীদের। এমনই পরিবেশে ঝুঁকি নিয়ে ফেনীর দাগনভূঞার সত্যপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়তে আসে শিক্ষার্থীরা।
বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ১০৩ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।
সরকারি হলেও বিদ্যালয়টিতে খেলার মাঠ নেই; নেই স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার, প্রয়োজনীয় শ্রেণিকক্ষেরও সংকট। এক কথায়, একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষার উপযোগী যে পরিবেশটুকু দরকার তার ছিঁটেফোটাও নেই এখানে। শিক্ষার উপযোগী পরিবেশের অভাবে প্রতি বছরই বিদ্যালয়টিতে কমছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। উপযুক্ত পরিবেশের অভাবে অভিভাবকেরা এই বিদ্যালয়ে তাদের সন্তানদের ভর্তি করাতে আগ্রহী নন বলে মত শিক্ষকদের।
জানা যায়, ১৯৮৭ সালে ৪ কক্ষবিশিষ্ট একটি টিনশেড ঘরের মাধ্যমে সত্যপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। সেই টিনশেডের ঘরটির অবস্থা-ই বর্তমানে জরাজীর্ণ।
আরও পড়ুন: ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় মেলা আয়োজিত
২০১১ সালে পুরনো স্কুল ভবন থেকে ১০০ গজ দূরে দুই কক্ষবিশিষ্ট একটি পাকা ভবন নির্মাণ করা হয়। শিক্ষার্থীদের জন্য পাঁচটি শ্রেণিকক্ষের প্রয়োজন হলেও দুই শ্রেণিকক্ষের বেশি নেই নতুন ভবনে। তাই বাধ্য হয়েই পরিত্যক্ত টিনশেড ঘরে শ্রেণি-কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে শিক্ষকদের। এতে পাঠদানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
অপরদিকে, জরাজীর্ণ ভবনটি এখন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
৩ দিন আগে
ভারতে এইচএমপিভির প্রাদুর্ভাব, হিলি-বেনাপোলে নেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা
বিশ্বের কয়েকটি দেশের পর ভারতে হিউম্যান মেটানিউমো ভাইরাস বা এইচএমপিভির প্রাদুর্ভাবের খবর প্রকাশ হলেও বাংলাদেশে এই ভাইরাসের বিস্তার রোধে দিনাজপুরের হিলি ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ সীমান্তে কোনো ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা এখনও নেওয়া হয়নি। ফলে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই প্রতিদিন এই দুই চেকপোস্ট দিয়ে ভারত ও বাংলাদেশে যাতায়াত করছেন অসংখ্য পাসপোর্টযাত্রী।
প্রতিদিন শত শত পণ্যবাহী ট্রাক এই দুই গুরুত্বপূর্ণ স্থলবন্দর দিয়ে ভারত-বাংলাদেশ যাতায়াত করছে। ট্রাকগুলোর চালক ও হেলপাররাও এক দেশ থেকে এসে অন্য দেশে অবস্থান করছেন। তবে তাদেরও কোনোপ্রকার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে না।
এদিকে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোভিড-১৯ এর মতোই ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে এইচএমপিভি ভাইরাস।
জ্বর, কাশি, নাক বন্ধ থাকা, গলা ব্যথা ও হাঁচির মতো সাধারণ ফ্লু-জনিত অসুস্থতার লক্ষণগুলোই এই ভাইরাসের উপসর্গ। তবে আক্রান্ত হওয়ার পর এটি গুরুতর আকার ধারণ করে। শিশু ও যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, এমন বয়স্ক মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি।
২০০১ সালে নেদারল্যান্ডসে প্রথম এই ভাইরাস শনাক্ত হয়। ২০০৭ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে কাম্বোডিয়ায় শিশুদের মধ্যে এই রোগের প্রকোপ দেখা দেয়। বিস্তার করতে করতে কিছুদিন আগে ভারতে এই ভাইরাসে দুই শিশু আক্রান্ত হয়েছে।
সম্প্রতি কলকাতায়ও এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর দেখা মিলেছে। এমতাবস্থায় মনে আতঙ্ক নিয়ে ভারত যাওয়া-আসা করছেন পাসপোর্টযাত্রীরা।
ভারতে যাওয়ার পথে হিলি চেকপোস্টে নওগাঁর শ্যামল চন্দ্র বলেন, ‘বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি করোনার মতোই নতুন একটি ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। ভারতে কয়েকদিন আগে এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। মনে আতঙ্ক থাকলেও কী করার, চিকিৎসার জন্য যেতেই হচ্ছে! ডাক্তারের সিরিয়াল নেওয়া আছে। আবার যদি ইমিগ্রেশনের কার্যক্রম বন্ধ হয় তাহলে চরম বিপদে পড়ব। তাই বাধ্য হয়ে যাওয়া।’
হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘সম্প্রতি এইচএমপিভি ভাইরাস সম্পর্কে জানতে পেরেছি। এজন্য আগাম সতর্কতা হিসেবে হিলি চেকপোস্টের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারতে চলাচল করা পাসপোর্ট যাত্রীদের মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্য সচেতনতার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে নির্দেশনা দিলে পরবর্তীতে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
আরও পড়ুন: এইচএমপিভি ভাইরাস: কারণ, লক্ষণ, প্রতিকার, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
৪ দিন আগে
অবশেষে শুরু হতে চলেছে সিলেট-ছাতক রেলপথ সংস্কার কাজ
চার বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকার পর আগামী ফেব্রুয়ারি মাসেই সিলেট-ছাতক রেলপথের সংস্কার কাজ শুরু হচ্ছে। গত শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক আফজাল হোসেন ছাতক বাজার স্টেশন পরিদর্শন শেষে এই তথ্য জানান।
এই রেলপথের সংস্কার কাজ শুরুর খবরে স্থানীয়দের মাঝে আশার আলো জেগেছে।
বিগত সরকারের সময় একনেকে সিলেট-ছাতক রেলপথ সংস্কার কাজের প্রস্তাবনা পাস হলেও তা শুরু করা যায়নি। এবার সেই কাজে গতি দিতে তৎপর হয়ে উঠেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে চলতি সপ্তাহে সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলনকক্ষে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সেই সভায় এই প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এর আগে, সিলেট থেকে ছাতক হয়ে সুনামগঞ্জ জেলা সদর পর্যন্ত রেললাইন স্থাপনের বিষয়ে সমীক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন হলেও এরপর অজ্ঞাত কারণে সেই কাজে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
আরও পড়ুন: সংকটে জর্জরিত আলমডাঙ্গার রেলস্টেশন, নেই সংস্কারের উদ্যোগ
১৯৫৪ সালে সিলেট রেলওয়ে স্টেশন থেকে পশ্চিম-উত্তরে সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক বাজার রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত ৩৪ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হয়। ওই সময় জেলার রেলপথের সর্বশেষ স্টেশন হিসেবে ছাতক বাজার রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণ করা হয়। তার আগে এটি আখাউড়া-কুলাউড়া-সিলেট পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল।
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাথর, বালু, চুনাপাথর, কমলালেবু, তেজপাতাসহ বিভিন্ন মালপত্র আনা-নেওয়ার জন্যই মূলত ছাতক-সিলেট রেলপথটি নির্মিত হয়। পরবর্তী সময়ে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল পরিবহনে ছাতক-দোয়ারাবাজার অঞ্চলসহ সুনামগঞ্জ জেলার মানুষের যাতায়াতের সুবিধার্থে প্রতিদিন এই রুটে সকাল-বিকাল যাত্রী ও পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করত। সিলেট যাতায়াতে ট্রেনই ছিল এই অঞ্চলের মানুষের একমাত্র ভরসা।
১৯৭৯ সালে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের রাজস্ব আয়ে ছাতক বাজার স্টেশন শ্রেষ্ঠ স্থান দখল করে নেয়। এরপর নানা অজুহাতে কমিয়ে দেওয়া হয় এই রেলপথে ট্রেন ও বগির সংখ্যা।
ছাতক থেকে ট্রেনে যাতায়াতে প্রায় ৪৫ মিনিটে সিলেট পৌঁছানো যায়। পথিমধ্যে খাজাঞ্চীগাঁও, সৎপুর ও আফজালাবাদ স্টেশনে ট্রেনগুলো যাত্রা বিরতি করে। শিল্পনগরী হিসেবে পরিচিত ছাতক থেকে চুনাপাথর, সিমেন্ট, স্লিপার, বালু, বোল্ডার পাথরসহ বিভিন্ন মালপত্র দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করতে রেলপথে সড়ক পথের চেয়ে পরিবহন খরচ কয়েক গুণ কম হতো।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২২ সালে ভয়াবহ বন্যায় ছাতক বাজার স্টেশন থেকে সিলেট পর্যন্ত ৩৪ কিলোমিটার রেললাইনের মধ্যে ১২ কিলোমিটার রেল রোড এমব্যাংকমেন্ট ও রেলপথ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপরই রেলপথটি পুনর্বাসন করে ট্রেন চলাচলের উপযোগী করার জন্য প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়।
ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশ রেলওয়ের সিলেট থেকে ছাতক বাজার সেকশন (মিটার গেজ ট্র্যাক) পুনর্বাসন প্রকল্পের একটি প্যাকেজের পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাবে সম্প্রতি অনুমোদনও দিয়েছে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। প্রকল্পের কাজে ক্রয়ের দরপত্র আহ্বান করা হলে চারটি দরপত্র জমা পড়ে। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসির সুপারিশ করা রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে মীর আখতার হোসেন লিমিটেড প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায়। এই প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২১৭ কোটি ৩৪ লাখ ৪ হাজার ৩৬৯ টাকা।
প্রকল্পটি একনেক থেকে ২০২৩ সালের ১১ এপ্রিল অনুমোদিত হয়। এই প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২০২৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। প্রকল্প-ব্যয়ের ৮০ শতাংশ ডলার এবং ২০ শতাংশ বাংলাদেশি টাকায় পরিশোধ করা হবে।
শুরুর দিকে সিলেট থেকে ছাতক হয়ে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত রেললাইন স্থাপনে দুটি পথের বিষয়ে সমীক্ষা চালানো হয়।
সমীক্ষায় বলা হয়, ৪৫ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার অ্যালাইনমেন্টে টপোগ্রাফিক (ভূমি) জরিপের কাজ করা হয়েছে। এই রুটে আছে ৬৬টি ছোটবড় জলাভূমি। দক্ষিণ খুরমা ও শান্তিগঞ্জে দুটি স্টেশন নির্মাণ করতে হবে। রেলপথ নির্মাণের জন্য সরাতে হবে ১২৮টি বসতবাড়ি ও অবকাঠামো। এজন্য কাটতে হবে সাড়ে ১৩ হাজার গাছ। পাঁচটি স্টেশনের জন্য ৫০ একরসহ মোট ৬১৩ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে।
এমন জটিল হিসাব-নিকাশের মুখে প্রকল্পটির কাজ আর সামনে এগোয়নি।
ছাতক বাজার ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের সভাপতি আফসার উদ্দিন গণমাধ্যমকে জানান, ছাতক-সিলেট রেলপথ বন্ধ থাকায় প্রতিদিন এই অঞ্চলের শত শত মানুষকে ভোগান্তি নিয়ে সিলেটে যাতায়াত করতে হচ্ছে। সুনামগঞ্জ রেলপথ স্থাপিত হলে জেলার ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রসার ঘটবে।
আরও পড়ুন: কক্সবাজারে বড় পরিসরে পর্যটকদের আকৃষ্ট করবে ঝিনুক আকৃতির রেলস্টেশন
গুরুত্ব বিবেচনায় অতিদ্রুত রেলপথের কাজ শুরু করার দাবি জানান তিনি।
এদিকে, ছাতক-সিলেট রেলপথ সংস্কারের অনুমোদনের পর শুক্রবার বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক আফজাল হোসেন ছাতক বাজার স্টেশন পরিদর্শন করেন।
তিনি জানান, ফেব্রুয়ারি নাগাদ সংস্কার কাজ শুরু হবে। তবে সুনামগঞ্জে রেলপথ স্থাপনের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান এ কর্মকর্তা।
৫ দিন আগে
মিয়ানমারের বেপরোয়া মাদক সাম্রাজ্য বিপদ বাড়াচ্ছে বাংলাদেশের
জান্তা ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যকার তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলা গৃহযুদ্ধের সুযোগ কাজে লাগিয়ে মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় প্রদেশ শান রাজ্য হয়ে উঠেছে মাদক কারবারিদের তীর্থভূমি। আর তাদের কর্মচঞ্চল্যে সবচেয়ে বড় ঝুঁকিতে রয়েছে প্রতিবেশী বাংলাদেশ।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে ইয়াবার সবচেয়ে বড় চালান আসে শান রাজ্য থেকে। ইয়াবার পাশাপাশি ওই রাজ্যে একরকম বিনা বাধায় উৎপাদিত হচ্ছে ভয়ঙ্কর মাদক ক্রিস্টাল মেথ (আইস) ও হেরোইন। এতদিন বাংলাদেশে আইসের মতো মাদকের বিস্তৃতি না থাকলেও সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে প্রায়ই জব্দ হচ্ছে সিনথেটিক এ মাদকের চালান।
সর্বশেষ গত বছরের নভেম্বরে টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ থেকে ৫ কোটি টাকা মূল্যের ১ কেজি আইস জব্দ করে কোস্টগার্ড। তার আগে আগস্টে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) অভিযানে টেকনাফ ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত থেকে ২১ কোটি টাকা মূল্যের আইস ও ইয়াবার বড় চালান জব্দ হয়।
২০২৩ সালের পর ২০২৪ সালেও জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিষয়ক সংস্থা ইউএনওডিসির প্রতিবেদনে আফিম উৎপাদনে শীর্ষ দেশ হিসেবে মিয়ানমারের নাম দেখা যায়। শান রাজ্যের পাহাড়ি ঢালে চাষ হয় পপি, যার আঞ্চলিক নাম পিস ফ্লাওয়ার বা শান্তির ফুল। এই পপি ফুল থেকেই নানা প্রক্রিয়ায় প্রস্তুত হয় হেরোইন। হেরোইনের পাশাপাশি এই রাজ্যে গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক ইয়াবা ও আইস কারখানা।
এতদিন মিয়ানমারে ইয়াবা তৈরির ৩৭টি কারখানার খোঁজ পাওয়া গেলেও গৃহযুদ্ধের সুযোগ কাজে লাগিয়ে গত কয়েক বছরে এই সংখ্যা পঞ্চাশ ছাড়িয়েছে।
ভৌগলিকভাবে শান রাজ্যের সীমান্তবর্তী দেশ চীন, থাইল্যান্ড ও লাওস। ইয়াবা তৈরির প্রধান কাঁচামাল মেথামফেটামিন ও ক্যাফেইনের বড় জোগান আসে গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেলে অবস্থিত থাইল্যান্ড ও লাওস থেকে। এছাড়া আইস তৈরির আরেক কাঁচামাল এফিড্রিনের বড় সরবরাহক চীনের মাদক কারবারিরা। অনেক সময় ভারত থেকেও আসে কাঁচামালের চালান। সব মিলিয়ে প্রস্তুতকারক হিসেবে শান রাজ্যের কারখানাগুলোতে চলে মাদকের রমরমা উৎপাদন।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে শান রাজ্যকে যুদ্ধবাজ নেতা, চোরাকারবারি এবং মাদকব্যবসায়ীদের সবচেয়ে বড় কেন্দ্র বলে উল্লেখ করা হয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মাদকের কেন্দ্রভূমি এ রাজ্যটিতে এতদিন সরকারের চোখ ফাঁকি দিয়ে এবং নানা সময়ে স্থানীয়, এমনকি দেশটির কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতাদের উৎকোচ প্রদানের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করতেন মাদক কারবারিরা। তবে বর্তমানে সরাসরি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষকতায় উৎপন্ন হচ্ছে ভয়ঙ্কর এসব নেশাদ্রব্য।
সংবাদমাধ্যমটিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মাদক কারবারিরা জানান, বর্তমানে এখানকার (মিয়ানমারের) সরকারব্যবস্থা একরকম ভেঙে পড়েছে। শান রাজ্যে একাধিক বিদ্রোহী সশস্ত্র সংগঠনের যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পর্যাপ্ত অর্থের প্রয়োজন। সশস্ত্রগোষ্ঠীর অর্থের মূল জোগান আসছে মাদক থেকে।
তাদের তথ্য অনুসারে, ব্যবসা রমরমা হওয়ায় বেড়েছে প্রতিযোগিতা। এতে করে উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে ইয়াবা, আইস ও হেরোইনের দাম। যেখানে দেশটিতে এক ক্যান বিয়ারের দাম ১০ ডলার, সেখানে প্রতি পিস ইয়াবা বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২৫ সেন্টে।
বাংলাদেশে বিস্তার
২০০৬ সালে বাংলাদেশের বাজারে প্রতি পিস ইয়াবা বিক্রি হতো ১ হাজার ২০০ টাকার ওপরে। সহজলভ্য হওয়ায় ২০২৩ সালে এর দাম নেমে আসে ৩০০ টাকায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে কক্সবাজারে মাদক ব্যবসায়ীরা প্রতি পিস ইয়াবা বিক্রি করেন ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। রাজধানীতে তা বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়।
মিয়ানমার হয়ে বাংলাদেশের বাজারে আসা এসব ইয়াবার চালান নিয়ন্ত্রণে রীতিমতো বেগ পেতে হচ্ছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে ইয়াবার প্রায় পুরো চালান আসে মিয়ানমার থেকে। টেকনাফ হয়ে তা দেশের বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়ে। ইয়াবার সঙ্গে সঙ্গে কারবারিরা আইস ও হেরোইনের চালানও পাঠাচ্ছে। প্রতিনিয়ত এরা মাদক পাচারে অভিনব সব পন্থা ব্যবহার করছে। প্রতি মাসেই পরিবর্তন হচ্ছে মাদক পাচারের রুট।
অধিদপ্তরের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, ইয়াবা ও আইসের জন্য রাজধানীতে আলাদা আলাদা হটস্পট আছে। ঢাকার রেল স্টেশন, বাস টার্মিনাল ও লঞ্চঘাট এলাকা ইয়াবার একেকটি বড় জোন। এর বাইরে মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্প, মিরপুর কালশী, পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা, কামরাঙ্গীরচর ও কারওয়ানবাজার এলাকায় ডজনখানেক সক্রিয় চক্র ইয়াবা কারবারের সঙ্গে জড়িত।
আইসের দাম বেশি হওয়ায় অভিজাত এলাকাগুলোতে এর বিস্তার বেড়েছে। গুলশান, বনানী ও উত্তরার মতো এলাকায় বর্তমানে কয়েকটি চক্র আইস বিক্রির সঙ্গে জড়িত। এদের অনেকেই নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে অনলাইন ক্রয়-বিক্রয়কে বেছে নিয়েছে।
অনেকের ধারণা, ইয়াবা ও গাঁজার আধিক্যে দেশে হেরোইনের ব্যবহার কমে গেছে। তবে অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে আবারও নতুন করে হেরোইনের বিস্তার শুরু হয়েছে।
বিশেষ করে মিয়ানমার থেকে প্রতিনিয়ত কমবেশি হেরোইনের চালান দেশে প্রবেশ করছে বলে জানান মোস্তাফিজুর রহমান।
আশির দশকে বাংলাদেশে হেরোইনের বিস্তার ছিল ভয়াবহ। পরবর্তীতে ২০০০ সালের পর ফেনসিডিল এবং ২০১০ এর পর ইয়াবার প্রধান্যে হেরোইনের ব্যবহার অনেকটাই হ্রাস পায়। তবে বিগত চার বছর ধরে দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় নতুন করে হেরোইনের চালান বাড়তে শুরু করেছে।
২০২০ সালে বিভিন্ন সরকারি বাহিনীর অভিযানে উদ্ধারকৃত হেরোইনের পরিমাণ ছিল ২১০ কেজি, যা ২০২৩ সালে বেড়ে ৭০০ কেজি ছাড়ায়। সর্বশেষ হিসাব অনুসারে, ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত দেশে ৩৫৭ কেজির বেশি হেরোইন জব্দ হয়েছে।
মিয়ানমারে আফিম চাষ বেড়ে যাওয়ায় সম্প্রতি বাংলাদেশে হেরোইন প্রবেশের পরিমাণ বেড়েছে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। তাদের মতে, শুধু টেকনাফ সীমান্ত ব্যবহার না করে হেরোইন পাচারকারীদের অনেকেই রুট হিসেবে বেছে নিয়েছে ভারতকে।
সমাধান কী?
মাদকের বিস্তার রোধে সরকারের পক্ষ থেকে বারবার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা বললেও আদতে এতটা কঠোর অবস্থানে সরকার নেই বলে মনে করেন অপরাধ বিশ্লেষকরা।
ইউএনওডিসির গবেষণা অনুযায়ী, একটি দেশে যে পরিমাণ মাদক প্রবেশ করে তার ৯০ শতাংশই বাজারে ছড়িয়ে পড়ে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গোচরে আসে মাত্র ১০ শতাংশ।
সেই হিসাবে পাশ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার হয়ে আসা মাদকে দিনকে দিন নেশাদ্রব্যের বড় হটস্পটে পরিণত হচ্ছে বাংলাদেশ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, জাতিসংঘ ১০ শতাংশ মাদক জব্দের কথা বললেও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ পরিমাণ আরও কম। বাংলাদেশে ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক আগের তুলনায় অনেক সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। মাদক যখন সহজলভ্য হবে তখন এর বিস্তার বাড়বে— এটাই স্বাভাবিক।
মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে যাতে কোনোভাবেই ইয়াবা, আইস বা হেরোইনের মতো মাদক প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য সীমান্তে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করার ওপর জোর দেন এ বিশেষজ্ঞ।
৫ দিন আগে